সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষের খুঁটির জোর কোথায়?

0
181

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হিসেবে সিনিয়র এরোড্রাম
অফিসার সুপ্লব কুমার ঘোষ গত ১৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখ হতে কর্মরত রয়েছেন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যোগদানের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত হওয়া এবং কেপিআই নীতিমালা ভঙ্গের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে রয়েছে।

সুপ্লব কুমার ঘোষ বিমানবন্দর পার্কিং এলাকায় পার্কিং সুবিধা দিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ড্রাইভারদের
নিকট থেকে নিয়মিত উৎকোচ গ্রহণ করে থাকেন।

এছাড়া তিনি বিমানবন্দরস্থ লাউঞ্জ/ রেস্টুরেন্টসমূহ হতে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করে থাকেন। তিনি কার পার্কিংয়ের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান বেলাল এন্টারপ্রাইজ হতে ইজারা মূল্যের অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেন। তার নামে নীলফামারী জজ কোর্টে চাঁদাবাজি মামলাসহ বর্তমানে ০৩ টি মামলা চলমান রয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজে ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ এর
দায়সারাভাব লক্ষ্যণীয় এবং কাজের মানও নিম্নমানের।

ইতোমধ্যে নবনির্মিত দেয়ালে ফাটল, প্লাস্টার ফুলে উঠা এবং ভিআইপি লাউঞ্জের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, গত ০১ মে ২০২১ তারিখ সৈয়দপুর বিমাবন্দরের রানওয়েতে লাইটের মোটর ঢেকে রাখার জন্য ৯৫ টি স্লাব/ ঢাকনা তৈরি করা হয়।

ব্যবস্থাপকের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে সম্পাদিত উক্ত কাজে পরিত্যক্ত রড, সিমেন্ট, বালু দিয়ে স্লাব ঢাকনা তৈরী এবং ঢালাইয়ের পুরুত্ব ৬ ইঞ্চির স্থলে ২.৫ ইঞ্চি দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তিনি প্রতিনিয়ত নিয়ম
বহির্ভূতভাবে সরকারি মালামাল বিক্রি করে উক্ত অর্থ নিজে ভোগ করে থাকেন।

সুপ্লব কুমার ঘোষ কর্তৃক তার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগকৃত মোমিন মোকছেদুলের মাধ্যমে
বিমানবন্দরের ঠিকাদারি কাজ হতে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে টাকা আদায় করে থাকেন।

বিমানবন্দরে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ এন্ড সন্স এর স্বত্বাধিকারী জনাব শিপন এর নিকট হতে অবৈধভাবে ১০ লক্ষ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত উপদেষ্টার মাধ্যমে বিমানবন্দর সংলঙ্গ ওয়েলফেয়ার মার্কেটের ৩৯টি দোকান থেকে দোকান প্রতি তিনি ৪০ হাজার টাকা দাবী করেন।

সম্প্রতি সুপ্লব কুমার ঘোষ সৈয়দপুর বিমানবন্দরের “এমটিবি লাউঞ্জ, নকশিকাঁথা লিমিটেড” এর এক্সিকিউটিভ
মোঃ মাহমুদুল হাসানের সহায়তায় ২,৫০,০০০ টাকা ঘুষের বিনিময়ে মোঃ রকনুজ্জামান পলাশ নামক এক
ব্যক্তিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে লিফটম্যান হিসেবে চাকুরী প্রদান করেন। রকনুজ্জামান প্রায় দেড় বছর যাবত
অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে চাকুরী করে আসছিল। পরবর্তীতে পদটি বিলুপ্ত দেখিয়ে গত ৩০ জুন ২০২৩ তারিখ হতে
তাকে চাকুরী হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এতে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিরূপ মনোভাবের
সৃষ্টি হয়েছে।

সুপ্লব কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মচারীদের ওভারটাইম কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
কর্মচারীরা পূর্বে মাসিক ১৭০ ঘণ্টার ওভারটাইম পেলেও বর্তমানে তাদেরকে ১২০ ঘণ্টা ওভারটাইম দেয়া হচ্ছে।
বিমানবন্দরে কর্মরত কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম তাকে এই কাজে সহযোগিতা করে বলে
জানা যায়।

সুপ্লব কুমার বিমানবন্দরের বিভিন্ন কাজ করার নাম করে বিল ইস্যু করে টাকা নিয়ে থাকেন। পানির ফিল্টারের
কোম্পানির লোকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তাদের থেকে ডোনেশন নিয়ে বিমানবন্দরে ফিল্টার স্থাপন করা হলেও
সুপ্লব কুমার বরাবর সেই ফিল্টার বাবদ বিল করে টাকা আদায় করেছেন।

এছাড়া বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় জন্মানো ঘাস/শন পরিস্কার করার জন্য তিনি বহিরাগত লোকদের নিয়ে আসেন, যারা বিনা পারিশ্রমিকে নিজেদের প্রয়োজনে ঘাস/শন কেটে নিয়ে যায়। কিন্তু সুপ্লব কুমার ঘাস/ শন পরিস্কার বাবদ বিল উত্থাপন করে কর্তৃপক্ষের নিকট হতে মোটা অংকের বিল নিয়ে থাকেন।

ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষের অনুকূলে সরকারিভাবে ‘জে’ টাইপ কোয়ার্টারে বাসা বরাদ্দ থাকলেও তিনি
সেখানে বসবাস না করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির রেস্ট হাউজে প্রায় ০১ বছর যাবত অবস্থান করছেন।

আকাশ পথে নিরাপদে বিমান চলাচলের জন্য সিভিওআর এর পরিবর্তে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির ডিভিওআর
ব্যবহৃত হচ্ছে। এ জন্য পূর্বে ব্যবহৃত সিভিওআর ভাঙ্গার দরপত্র পেয়েছে আরএন্ডআর কোম্পানী।

সুপ্লব কুমার ঘোষ ইতোপূর্বে ব্যবহৃত সিভিওআর বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে ফেরত প্রদান না করে এর পরিত্যক্ত মূল্যবান সামগ্রী নিয়ম বহিভুতভাবে নিজের অধীনে রেখে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের টার্মিনাল সাইডে একটি অস্থায়ী টিনসেড ঘর নামাজ ও ওজু খানা হিসেবে ব্যবহৃত
হতো। ড্রাইভার ও পরিদর্শনে আসা সাধারণ নাগরিক এবং সাধারণ যাত্রীগণ সেখানে নামাজ আদায় করত।

কিন্তু ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে উক্ত নামাজের ঘরের টিনের চালা খুলে রেখে স্থানটিকে এমনিই ফেলে রেখেছেন এবং সেখানে কোন লোককে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে উক্ত স্থানে নামাজ আদায় করতে না পারায় স্থানীয় জনসাধারণ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিমানবন্দর একটি কেপিআই/ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ইতোপূর্বে কোন রাজনৈতিক
সংবাদ সম্মেলন/সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত না হলেও সম্প্রতি সুপ্লব কুমার ঘোষের অনুমতি  ভিভিআইপি লাউঞ্জে
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। তিনি ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব ধরে রাখার
জন্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তোষামোদী করে থাকেন।

এছাড়া তার অফিস কক্ষে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে আপ্যায়নসহ আলোচনা সভা হয়ে থাকে।

তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও এর সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, দিনাজপুরের সংসদ সদস্য
মনোরঞ্জন শীল গোপাল, নীলফামারীর সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, দিনাজপুরের সংসদ সদস্যমোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করে চলেছেন।