বিদ্যালয়ে সশরীরে আছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী কাগজ-কলমে

0
130

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ বকসীগঞ্জ রানী দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে অবস্থান বিদ্যালয়টির। শিক্ষক-কর্মচারী মিলে আছেন ১৪ জন। তবে কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। স্কুল টাইম, অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের দৌড়ঝাঁপ আর খেলাধুলার কথা থাকলেও মাঠটি যেন গৌচারণ ভূমি।

সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণীকক্ষগুলো ফাঁকা, নেই কোনো শিক্ষার্থী। এলোমেলোভাবে পড়ে আছে বেঞ্চগুলো। অফিস কক্ষে খোসগল্পে মেতেছেন শিক্ষকরা। এই চিত্র প্রতিকার্য দিবসের বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।এলাকাবাসী জানায়, নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার। এরপর এমপিও ভুক্ত করা হয় বিদ্যালয়টিকে। তবে এখানে কোনো মতে চলছে শিক্ষাক্রম। প্রধান শিক্ষক বোরহান আলী জড়িয়েছেন নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে। বিদ্যালয়ের রিজার্ভ ও সাধারণ ফান্ডের অর্থ আত্মসাত, দাতা সদস্য পরিবর্তনের চেষ্টা, গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পাঁয়তারাসহ সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধ। এঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছিল।

স্থানীদের অভিযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকায় মামলা-মোকদ্দমা চলছে। প্রধান শিক্ষক বোরহান আলী প্রায় ১ বছর বিদ্যালয়ে আসেন না। বাড়িতে বসে পিয়নের মাধ্যমে শিক্ষক হাজিরা খাতায় শতভাগ উপস্থিতি স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন তিনি। আর কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও প্রতিষ্ঠানে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। এমনকি এই বিদ্যালয়ে নেই কোনো ম্যানেজিং কমিটিও। রয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভাব। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে। কাগজ-কলমে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে ৮ থেকে ১০ জনও পাঠগ্রহণ করে না।স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় সন্তোষজনক উপস্থিতি দেখানো হয়। কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ছাড়াই চলছে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এতে করে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে অভিভাক ও স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ পদাধিকারে বিদ্যালয়টির সভাপতি ইউএনও। শিক্ষার্থী শূন্য প্রতিষ্ঠানে কীভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হচ্ছে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।

আতাউর রহমান প্রামানিক নামে এক অভিভাবক বলেন, স্কুলটির নানা সমস্যার কারণে কারও সন্তানকে এখানে ভর্তি করাতে চান না। কতিপয় ছাত্রী ভর্তি হলেও তারা স্কুলে আসে না। একদম শূন্য শিক্ষার্থী দিয়ে বিদ্যালয় চালানো হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের দেখা দরকার।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরিফা খাতুন ও বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা সবাই অন্য প্রতিষ্ঠানে কোচিং করে। তাই এখানে অনেকে পাঠগ্রহণ করে না। আর অসুস্থতার কারণে হেড স্যার স্কুলে আসেন না।বকসীগঞ্জ রানী দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো সত্য নয়। সহকারী শিক্ষকরা স্কুলে অনিয়মিত হওয়ায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা সেটি তার জানা নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

তবে এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।