ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ : বিশ্বে খাদ্য সংকটের শঙ্কা

0
103

যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। জাতিসংঘ বলছে, এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন দরিদ্র দেশগুলোর মানুষেরা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি শুধু নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারেও পড়েছে প্রভাব। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের চাষিরা গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে না পারায় বিশ্বে খাদ্য সরবরাহে বিশৃঙ্খলতা তৈরি হতে পারে। এই যুদ্ধ চলতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তায় চরম অনিশ্চয়তা তৈরির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির ইউক্রেনীয় নির্বাহী পরিচালক ভ্লাদিস্লাভ রাশকোভান।

সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৬ মার্চ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের ২০২টি বিদ্যালয়, ২৪টি হাসপাতাল, বহুতল ভবনসহ ১৫০০-র বেশি বাসভবন, সড়ক, অসংখ্য অবকাঠামো সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবের পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলোর মানুষেরা খাদ্য, জ্বালানি ও সারের আকাশচুম্বী দামের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের অর্ধেক সূর্যমুখী তেল এবং ৩০% গমের চাহিদা মেটায়।” সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “এরইমধ্যে বিভিন্ন শস্য পণ্যের দাম ২০০৭-০৮ সালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

বিশ্বের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের মূল্য শেষ পর্যন্ত তাই দরিদ্র মানুষগুলোর ঘাড়ে পড়বে বলে সতর্ক করেন গুতেরেস।

ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বে খাদ্যের দাম ২০% পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে দেশটির কৃষকরা চাষাবাদ করতে না পারলে এবং সামনের দিনের রাশিয়া রপ্তানিতে লাগাম টেনে ধরলে এমন পরিস্থিতি হবে বলে মনে করছে তারা।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ এবং ইউক্রেন পঞ্চম বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ। দেশ দুইটি যৌথভাবে বিশ্বের ১৯% বার্লি ১৪% গম এবং ৪% ভুট্টার চাহিদা মিটিয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বিশ্বে খাদ্য শস্য রপ্তানির এক তৃতীয়াংশেরই যোগান দেয় তারা।

শুধু তাই নয় রাশিয়া বিশ্বে সার রপ্তানিতেও রয়েছে নেতৃত্বে। শুক্রবার এফএও-এর মহাসচিব কু ডঙ্গিও বলেন, এই দুই প্রধান রপ্তানিকারক দেশের কৃষি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার চরম অবনতি ঘটতে পারে।

এরই মধ্যে এফএও-এর ফেব্রুয়ারির খাদ্যমূল্যের সূচক রেকর্ড স্পর্শ করেছে, এক বছর আগের তুলনায় ২০.৭% বেড়েছে।

এদিকে বিশ্ব বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে চলার মুখে রপ্তানিতে লাগাম টেনে ধরছে রাশিয়া। অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে বার্লি, রাই, গম. ভুট্টা, চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্য পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে ক্রেমলিন। রপ্তানির এই নিষেধাজ্ঞা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হচ্ছে, যা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে কিছু কিছু দেশ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামরিক অভিযান ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন ২৭ লাখের বেশি মানুষ। এ ছাড়া যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৩শ’ সেনা নিহত এবং রাশিয়ার ১২ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের প্রায় ৫০০ সৈন্য নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ অভিযানে ইউক্রেনে ৬৩৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৬ শিশু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইউক্রেনে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে