দ্রব্যমূল্য যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও বেশি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়লেও দেখতে হবে মানুষ ক্রয় করতে পারে কি না। মানুষ আগের চেয়ে ভালো আছে কি না। বাংলাদেশের মানুষ আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে। এজন্য মানুষের মনে স্বস্তি আছে।
শনিবার (৫ মার্চ) আগারগাঁও ফিল্ম আর্কাইভে ১৫তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাসা থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন মন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীতে সবসময় দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। যখন চল্লিশের দশকে বাংলায় দুর্ভিক্ষ হয় তখন দ্রব্যমূল্য অনেক কম ছিল। তখন এক টাকায় অনেক কেজি চাল পাওয়া যেতো। এখন তো এক টাকায় এক কেজি চালও পাওয়া যায় না। তখন এক আনায় কয়েক কেজি চাল পাওয়া যেতো। তখন কিন্তু দুর্ভিক্ষ হয়েছে, কারণ তখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-পাকিস্তানসহ পৃথিবীর সবদেশে গত কয়েক বছরে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু মাথাপিছু আয় সব জায়গায় বাড়েনি। আমাদের দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়েনি তা নয়, কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে অনেক বেশি বেড়েছে মানুষের মাথাপিছু আয়।
তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় সাড়ে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ। অন্যান্য আয়ের মানুষেরও ক্রয়ক্ষমতা তিনগুণের কাছাকাছি বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘জাতিসংঘে বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা সংবিধানের মূল্যবোধের পরিপন্থী। রাশিয়ার সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য কৌশল অবলম্বন করেছে’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল। বহুক্ষেত্রে বাংলাদেশ এরকম ভোটদানে বিরত থাকে। এবার যখন জাতিসংঘে প্রস্তাব আনা হয়, তখন ভারতসহ আরও অনেকগুলো দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে আমার প্রশ্ন- ভারত কেন বিরত ছিল? সেটির একটা ব্যাখ্যাও যেন তিনি দেন।
তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। আমরা অবশ্যই যেকোনো সংঘাত-যুদ্ধের বিরোধী। পৃথিবীতে শান্তি স্থাপিত হোক, শান্তি বিরাজ করুক- সেটিই আমরা চাই। জাতিসংঘে কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল, ভারতও বিরত ছিল। এখন ভারত কী কারণে বিরত ছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যদি সেই ব্যাখ্যাটা দেন খুব ভালো হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আসলে কোনো ইস্যু নাই তো, তাই মির্জা ফখরুল জাতিসংঘ ও ভোটদান নিয়ে কথা বলেন। এর আগে খালেদা জিয়াকে বিদেশ না পাঠানোয় তার জীবন সঙ্কটাপন্ন বলে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু খালেদা জিয়া যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন, তখন তারা প্রচণ্ড হতাশ হলেন। এখন খড়কুটো ধরে তারা রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন মাত্র।
বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী যখন কোনো জাহাজ পরিত্যক্ত হয় তখন কিন্তু সেই জাহাজের মালিকানা কোথায় যাবে সেটি বলা যায় না। সরকার জাহাজের মালিকানার চেয়েও নাবিকদের জীবন রক্ষাকেই গুরুত্ব দিয়েছে। সেজন্য জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাবিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকার রাখেন।
শেখ হাসিনা নাবিকদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছেন। একই সঙ্গে সেখানে যারা বাংলাদেশি আছেন তাদেরকেও নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে কাজ করছে। এরইমধ্যে অনেককেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যোগ করেন ড. হাছান মাহমুদ।