ক্লুলেস মামলার আদ্যোপান্ত সহ খুনি দীপেশ ওরাংকে গ্রেফতার করেছে কমলগঞ্জ পুলিশ

0
78

কে এস এম আরিফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার দেওড়াছড়া চা বাগানের ২৩ নং সেকশনে অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে খবর দেয়। থানা পুলিশ সংবাদ প্রাপ্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় বের করে এবং খুনি দীপেশ ওরাংকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

অন্ধ ভালোবাসা মাধবপুর চা বাগানের রেশমা আক্তার এর জীবনে নিয়ে আসলো করুণ মৃত্যু। আজ থেকে ৮/৯ মাস আগে মাধবপুর চা-বাগানে বন্ধুর জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে সুনছড়া চা-বাগানের দীপেশ ওরাং এর সাথে পরিচয় হয় রেশমার। পরিচয়ের সূত্র ধরে দূজনের কথাবার্তা, কাছে আসা দুজনের মধ্যে মন বিনিময় এভাবেই চলছিল তাদের দিন। সময়ের আবর্তনে তাদের এই ভালোবাসা ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে। রেশমা তার প্রেমিককে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে দীপেশ কে বিয়ের কথা জানায়।

দীপেশ সানন্দে রাজি হয়। দূজন মিলে পরিকল্পনা করে গত ৯ই নভেম্বর সন্ধ্যার পর দুজনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। পরিকল্পনা মোতাবেক দীপেশ রাত ৯ টার দিকে বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে মাধবপুর চা-বাগান‌ থেকে রেশমাকে নিয়ে দেওড়াছড়া চা বাগান হয় মৌলভীবাজারের দিকে রওনা হয়। দেওড়াছড়া চা-বাগানের ২৩ নং সেকশনে পৌঁছানোর পর রাস্তা থেকে দশ পনের গজ ভেতরে চা বাগানের মাঝখানে দুজন বসে। রেশমি হয়তো অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশের কাঁধে ভর করে ভালোবেসে জীবনটা পার করতে চেয়েছিল।

কিন্তু দীপেশ এর ভেতরে ছিল অন্য কিছু ২৩ নং সেকশনের ওই স্থানে কথা বলতে বলতে দীপেশ প্যান্টের পেছনের পকেটে থাকা রশি বের করে পেছন থেকে রেশমার গলায় পেছিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রেমিকের সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন নিয়ে রেশমা তার ব্যাগে করে নিয়েছিল কিছু কাপড় রেশমি চুরি কসমেটিক্স। দীপেশ সেগুলো কিছু দূরে ফেলে চলে যায়। পেছনে পড়ে থাকে রেশমার নিথর দেহ। রেশমা জানেনা কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে। সে ভালোবেসে বিশ্বাস করেছিল দীপেশ কে। সকল বাধা উপেক্ষা করে দীপেশ এর সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে নিজের বাবার ঘর ছেড়েছিল।

রাত তখন প্রায় দশটা দেওড়াছড়া চা বাগানের ২৩ নং সেকশনে ঘটে গেল এক লোমহর্ষক হত্যাকান্ড। অন্যদিকে রেশমার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকে । একদিন, দুইদিন‌ করে সময় গড়িয়ে যায় চা বাগানের জনশূন্য স্থানে পরে থাকে রেশমার মৃতদেহ। গত১৩ই নভেম্বর চা শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে একটি মেয়ের মৃতদেহ দেখে কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে অফিসার ইনচার্জ কমলগঞ্জের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। অফিসার ইনচার্জ ইতিমধ্যে ঘটনাটি মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার সহ উর্দ্ধতন অফিসারদেরকে অবহিত করেন।

মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পিবিআই ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ টিমকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। পিবিআই টিম ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে ব্যর্থ হয় কারণ লাশে পচন ধরে গিয়েছিল। পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করেন।

গত১৪ই নভেম্বর তারিখে রেশমা আক্তার এর বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম পুলিশের মাধ্যমে হাসপাতালে গিয়ে লাশের পরিধেয় কাপড়, গলায় তাবিজ, পায়ের নুপুর দেখে লাশটি তার বোনের বলে শনাক্ত করেন।

ইতিমধ্যেই পুলিশ ভিকটিম এর পরিচয় ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়। সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুলিশ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারে। প্রাথমিকভাবে তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি কে টার্গেট করে আগাতে থাকে পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম।

সন্দেহভাজন দীপেশ ওরাংকে গত ১৪ই নভেম্বর তারিখে সুনছড়া চা বাগানের বাজার লাইন থেকে আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, রেশমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দেওড়াছড়া চা বাগানে কে বা কাহারা তার মোটরসাইকেল আটকে রেশমা কে নিয়ে যায় এবং তাকে মারধোর করে। এরপর সে বাড়ি চলে আসে কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু জানায় নাই। দীপেশ এর কথাবার্তার মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য যে বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়েছিল তার সাথে কথা বলে পুলিশের ধারণা বদ্ধমূল হয় যে দীপেশ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে দীপেশ এক পর্যায়ে পুরো ঘটনা স্বীকার করে। রেশমা আক্তার এর সাথে প্রেমের এক পর্যায়ে তাদের দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। তাই রেশমা আক্তার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল, তা না হলে রেশমা তার নামে নারী নির্যাতন মামলা করবে। এই নারী নির্যাতন মামলার ভয়ে দীপেশ ঠান্ডা মাথায় রেশমা আক্তারকে খুনের ছক আঁকতে থাকে।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দীপেশ রেশমাকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কথা বলে গত ৯ই নভেম্বর তারিখ রাতে দেওড়াছড়া চা বাগানে নিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আটক দীপেশ ওরাংকে গত ১৫ই নভেম্বর তারিখে মৌলভীবজার জেলা আদালতে প্রেরন করা হলে সে ঘটনার দায় স্বীকার করে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।