আওয়ামীপন্থীদের চাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, ফল স্থগিত

0
86

রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছিল। এমন সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা দাবি করলেন ভোট পুনর্গণনার। কিন্তু আপত্তি জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ নিয়ে শুরু হলো হট্টগোল। একপর্যায়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের প্রবল চাপের মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এতে নির্বাচনের ফল ঘোষণা স্থগিত হয়ে গেছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা দাবি করেন, ২১টি পদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯টিতেই তাদের প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। টেবিলে ভোট গণনাকালে থাকা তাদের প্যানেলের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তারা এই ফল জেনেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও এই ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা দেখেন যে সভাপতি পদে তাদের প্রার্থী মাত্র তিন ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হচ্ছেন। তাই তারা ফল পুনর্গণনার দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণার প্রস্তুতিকালে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শুক্রবার দুপুরের দিকে নগরীর একটি রেস্টুরেণ্টে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন। একইসাথে দ্রুত ফল ঘোষণা করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

সূত্র মতে, প্রতিবারেরর মত এবারো দুটি প্যানেল রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে অংশ নেয়। এবার আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ২১টি পদের বিপরীতে দুই প্যানেলের একজন করে মোট ৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন মো: ইব্রাহিম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন সাইফুর রহমান খান রানা। আর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে সভাপতি পদে আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক পদে জমসেদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৬৮৩ জন। এরমধ্যে ৬৩৭ জন ভোট দেন। ভোটগ্রহণের পর রাতে গণনা শুরু হয়। ১১টি টেবিলে তিনজন করে ভোট গণনা শুরু করেন। এই তিনজনের মধ্যে দুই প্যানেল থেকে দু’জন এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একজন ছিলেন। গণনার পর বিভিন্ন টেবিল থেকে আসা ফল একত্রিত করছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর সেলিম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নেন।

এমন সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা আবারো ভোট গণনার দাবি জানান। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপত্তি জানান। তিনি বলেন, ফল নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তারা তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। তার এ কথার পর শুরু হয় হট্টগোল।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দাবি করেন, নির্বাচনে তাদের প্যানেলের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৯ জন বিজয়ী হয়েছেন। শুধু সদস্য পদে আওয়ামীপন্থী দু’জন বিজয়ী হয়েছেন। এ কারণে আওয়ামীপন্থীরা জটিলতার সৃষ্টি করছেন। এসময় দুইপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও শুরু হয়। একপর্যায়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা লাথি দিয়ে ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এ সময় তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন।

প্রবল চাপের মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফল ঘোষণা না করে রাত ১টার দিকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর আগে, তিনি জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদকে ফোন করেন। পরে জেলা প্রশাসক একজন কর্মকর্তাকে পাঠালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যালটগুলো অন্য একটি বাক্সে ঢুকিয়ে তার হাতে তুলে দেন। ব্যালট বাক্সটি এখন জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি শাখায় রয়েছে।

এই ঘটনার পর শুক্রবার দুপুরের দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জমসেদ আলী, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আইনজীবী এরশাদ আলী ঈসা, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, সিনিয়র আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদীসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

তারা দাবি করেন, ২১টি পদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯টিতেই তাদের প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। টেবিলে ভোট গণনাকালে থাকা তাদের প্যানেলের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তারা এই ফল জেনেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও এই ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা দেখেন যে সভাপতি পদে তাদের প্রার্থী মাত্র তিন ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হচ্ছেন। তাই তারা ফল পুনর্গণনার দাবি জানান।

একপর্যায়ে নির্বাচনের ফল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। তারা এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানান। একইসাথে দ্রুত ভোটের ফল প্রকাশের দাবি জানান তারা।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মো: ইব্রাহিম গণমাধ্যমকে বলেন, এটা আমাদের আইনজীবী সমিতির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করা সঠিক হবে না।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা সংবাদ সম্মেলন করে কী অভিযোগ তুলেছেন, আমরা তা জানি না। আগে দেখি, পরে এ নিয়ে কথা বলা যাবে।

পদত্যাগ করা প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ জাহাঙ্গীর সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, ফল ঘোষণার আগমুহূর্তে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা অযৌক্তিকভাবে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে তারা হট্রোগোল করেন। তাদের দাবি না মানায় তারা ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলেন। আমাকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেন। পরে আমি পদত্যাগ করে ব্যালট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারি শাখায় জমা দিয়েছি। তাই এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন।