ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট নয়, হোল ব্লাড সঞ্চালনই ভালো : বিএসএমএমইউ

0
91

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সাধারণ মানুষ ধারণা করেন প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে রক্ত দেওয়া লাগে। এজন্য প্লাটিলেট কমলে তারা চিকিৎসককে রক্ত দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। ১০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নামলে রক্ত দিতে হবে কি না সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবে।

চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ কোনো অবস্থায় চিকিৎসা প্রটোকল ভাঙা যাবে না। প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, ওভার ফ্লুইড এবং ফ্লুইডের অভাব রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্ত সঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই, সঞ্চালন করলে রক্ত (হোল ব্লাড) সঞ্চালন করাই শ্রেয়, প্লাটিলেট নয়। সেমিনারে বক্তারা এই মত দেন।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ডিলেমা’ সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। মাসিক এ সেন্ট্রাল সেমিনার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটি।

সেমিনারে বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বরের বিপজ্জনক উপসর্গ হলো- অনবরত বমি হওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়া, তীব্র দুর্বলতা অনুভব করা, তীব্র পেটব্যথা, ফুসফুসে পানি জমা, তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়া। গর্ভবতী মা, ক্যানসার রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন রোগীর জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর ছেড়ে যাবার পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা ডেঙ্গু রোগীর ক্রিটিক্যাল সময়। এটি ডেঙ্গু জ্বরের গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে বলে জানান বক্তারা।

ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে, তা রেফার্ড করা ঠিক নয় মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, ডেঙ্গু শক ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ম্যানেজ করতে হয়। রক্তচাপ কমের রোগীকে রেফার্ড করলে পথেই রোগী খারাপ হতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু শকের রোগীকে রেফার্ড না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আলাদা করে ডাব, পেঁপে পাতা, পেঁপে জুস, ড্রাগন ফল বেদানা ইত্যাদি খাওয়ার আলাদা কোনো প্রয়োজন নাই জানিয়ে বলা হয়, ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সিবিসি টেস্টই যথেষ্ট। সিবিসি টেস্টের মধ্যে ডব্লিবিসি নিপ কাউন্ট এবং হেমাটোক্রিট কাউন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের প্রতি বেশি যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, শিশুদের শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা স্পষ্ট করে বলতে পারে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও যেকোনো সময় শিশুরা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে চলে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের যথাযথ মনিটরিং করতে হবে। যাতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থাপনা করা যায়।

ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ৩ ধরনের আছে। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য অনুমোদিত। জনসাধারণের জন্য ভ্যাকসিন ব্যবহারের পূর্বে আর গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন সেমিনারে আগত বক্তারা।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা, শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।