দুই এমপির মৃত্যুতে শোক জানালো সংসদ

0
165

নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিনের মৃত্যুতে শোক জানালো জাতীয় সংসদ। সরকারি দলের এই দুই এমপির মৃত্যুতে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংসদে শোক প্রস্তাব তোলা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। এর আগে সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এতে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন।

শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর সংসদে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের এমপি মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী। পরে সংসদের বৈঠক সোমবার বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। চলতি সংসদের কোনও সদস্য মারা গেলে রেওয়াজ অনুযায়ী বৈঠক মুলতবি করা হয়।

শোক প্রকাশের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের সংসদের অধিবেশন শুরুই করতে হয় শোক প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে। ভেবেছিলাম এবার বোধহয় তার থেকে ব্যতিক্রম হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এ পর্যন্ত এই সংসদের ২৮ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। যেখানে ২৬ জনই আওয়ামী লীগের। আর দুই জন জাতীয় পার্টির। এরমধ্যে কয়েকজন নারী সদস্যও রয়েছেন।

প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আব্দুল কুদ্দুস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, ছাত্রলীগ করতেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। নাটোর ছিল সন্ত্রাসের জায়গা। তিনি সেখানে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও তাকে জবরদস্তি করে হারানো হয়েছিল। তিনি জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন।

এমপি রেবেকা মমিনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার ছাত্রজীবন থেকে পরিচয় ছিলেন। তিনি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, তার সঙ্গে আমার পত্রমিতালি ছিল। তিনি সবসময় চিঠি লিখতেন। আমিও উত্তর দিতাম। তিনি চিঠিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতেন। আমি কলেজের ভিপি হওয়ার পর চিঠি দিয়ে উৎসাহিত করেন। তিনিও ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।’

সদ্য প্রয়াত সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানেরও স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মতিউর রহমান ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচন করতেন। কিন্তু আমরা যখন জোট করি, তিনি তার আসনটি বেগম রওশন এরশাদকে ছেড়ে দেন। তিনি যে কত বড় নেতা ছিলেন—যে মুহূর্তে আমি তাকে বললাম, জোট করবো, এই সিটটি ছাড়তে হবে। তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আপত্তি করেননি, সঙ্গে সঙ্গে সিটটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। না হলে তিনি এখন ওই সিটের এমপি থাকতেন।’

বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ বহু নেতাকর্মী হারিয়েছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘তারা যে সংগ্রাম করে গেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন; জাতির পিতার পাশে ছিলেন। জাতির পিতাকে হত্যার পর তারা নানা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

আমাদের রাজনীতি জনগণের কল্যাণে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেবেকা মমিন বা আব্দুল কুদ্দুস সবসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রেবেকা মমিন জমি দান করে গেছেন। এই ধরনের মানসিকতা তাদের ছিল। তাদের হারিয়েছি। এটা সত্যি কষ্টের, বারবার আমাদের শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের পর থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমাদের উন্নয়নের ধারাটা একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। এটা সম্ভব হয়েছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সংসদ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন এ কারণে। আজ যাদের হারিয়েছি এবং সেখানে নতুন যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আবেদন থাকবে, যে আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া—এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

সরকারের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে হবে। সবাই নিবেদিতপ্রাণ হয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষের সেবা করে যাবেন, এটাই আমি চাই। মানুষের সেবা করাটাই সব থেকে বড় পাওয়া। এর চেয়ে বড় কিছু নেই। রাজনীতির নেতাদের জন্য এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আজকে যারা মারা গেছে তাদের অবদান রয়েছে, যে কারণে আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।’

শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়াসিকা আয়শা খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাজ্জাদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল, আশরাফ আলী খান খসরু, আব্দুল আজিজ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সরকার দলের দুই এমপি ছাড়াও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মতিউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সার, মোহাম্মদ উল্ল্যার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে।

এছাড়াও বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরাজুল আলম খান, কবি মোহাম্মদ রফিক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুর স্ত্রী কামরুন্নেছা আশরাফ দীনা, সংসদ সদস্য (যশোর-৩) নাবিল আহমেদের পিতা অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের এমপি কানিজ ফাতেমা আহমেদের পিতা কামাল উদ্দিন আহমেদ খান, কৃষিবিজ্ঞানী কাজী পেয়ারার উদ্ভাবক কাজী এম বদরুদ্দোজার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সংসদ।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের মাউইতে ভয়াবহ দাবানল, ভারতের ওড়িশায় মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা এবং দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণ করে সংসদ শোক প্রকাশ করেছে।