শ্রীনগরে আলু উত্তোলন শুরু, লোকসানের শঙ্কা

0
146

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে শ্রীনগরে বিভিন্ন জমিতে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা ফসলের আশানুরূপ ফলন হলেও কাঙ্খিত মূল্য ও পাইকারের দেখা না পাওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন। এর মধ্যে আলু সংরক্ষণের হিমাগারেও বস্তা প্রতি ৩০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

উপজেলায় এ বছর প্রায় ২ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষক মাঠে কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি কানি (১৪০ শতাংশ) জমিতে আলু চাষে খরচ পড়ছে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। সমপরিমান জমিতে আলুর উৎপাদণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে গড়ে ৪শ’ মণ। সব বাদে কৃষকের প্রতিমণ আলুর উৎপাদণ মূল্য খরচ পড়ছে ৫শ’-৬শ’ টাকা। গেলো ২ বছর এ চাষে ফসলের কাঙ্খিত ফলন ও বাজার মূল্য না পাওয়ায় শতশত আলু চাষি লোকসানের মুখে পড়েন। ক্ষতিগ্রস্তরা লোকসান কাটিয়ে উঠতে এবারও লাভের আশায় আলু ক্ষেতি করে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন। বর্তমান খোলা বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা করে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে বীরতারা, আটপাড়া, তন্তর, কুকুটিয়া ও ষোলঘর ইউনিয়নের খৈয়াগাঁও ও পুর্ব দেউলভোগে আলুর আবাদ করা হয়েছে। এসব এলাকায় জমিতে সবেমাত্র আলু উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ক্ষেতের আলু উঠানো সম্পন্ন হয়ে যাবে। জানা যায়, মুন্সীগঞ্জ তথা ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরে অর্থকরী ফসল হিসেবে আলু সুপরিচিত। এ অ লে বেশীর ভাগ জমিতে ডায়মন্ড জাতের লাল ও সাদা আলুর আবাদ করা হয়েছে। দিনব্যাপী জমিতে স্থানীয় কৃষক ও শ্রমিকরা আলু উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এখানে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও মাঠে সমান তালে কাজ করছেন।

বীরতারা এলাকার মো. মোকলেছ মেম্বার (৭০), আবুল হোসেন নীলচাঁন (৬০), সালেপুরের আনোয়ার হোসেন (৫০), কুকুটিয়ার আলম হোসেন বলেন, আলু চাষে প্রতি কানি জমিতে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক এর খরচ কিছুটা কম-বেশীও হতে পারে। কানিতে গড়ে ৪শ’ মণ আলু উৎপাদণের টার্গেট করছেন তারা। আলুর কদর না থাকায় এলাকায় আলুর বেপারীরাও আসছেন না। তবে জানা গেছে বিভিন্ন আড়তে নতুন আলুর মণ কেনাবেচা হচ্ছে ৪০০-৪৩০ টাকা করে। আলুর মূল্যবৃদ্ধি না হলে খরচ উঠবে না। আবুল কাশেম (৫০) নামে এক কৃষক বলেন, নিজের ২৮ শতাংশ জমিতে ডায়মন্ড জাতের (বাক্স) বীজআলু বপণ করে ৫০ কেজির ৭০ বস্তা আলু উৎপাদণ হয়েছে তার। তার খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। পাইকার না থাকায় আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে পাঠাচ্ছি। আটপাড়া এলাকার কল্লিগাঁও গ্রামের মো. আফাজউদ্দিন (৬৫) বলেন, গেলো বছর ১২ কানি জমিতে আলু চাষ করে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় ৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবার ৫ কানি জমিতে আলু চাষ করেছি। আলুর ফলন ভালই হয়েছে। তবে আলুর বর্তমান বাজার মূল্য দেখে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন তিনি।

শ্রীনগর কোল্ড ষ্টোরেজ লিমিটেডের ম্যানেজার শিশির আহমেদ জানান, গতবার হিমাগারে আলুর বস্তা প্রতি ভাড়া রাখা হয়েছে ধরা ২২০ টাকা। ৩ দফা বিদ্যুৎতের দাম বৃদ্ধির কারণে এবার শুধু বাড়তি বিদ্যুৎ বিল হিসেবে বস্তাপ্রতি ৩০ টাকা বেশী ধরা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রানী জানান, স্থানীয়রা আলু উত্তোলনের কাজ শুরু করেছেন। উপজেলায় এ বছর আলুর উৎপাদণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২ হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন। অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় আলুতে ১০টি পদর্শনী দেওয়া হয়েছে।