গণভবন যেন ‘গেরস্তের বাড়ি’

0
197

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সেই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু নির্দেশনা দিয়েই ক্ষান্ত হননি সরকারপ্রধান, নিজেও এর ওপর জোর দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারপ্রধানের বসবাসের জন্য বরাদ্দ গণভবন যেন রূপ নিয়েছে ‘গেরস্তের বাড়িতে’।

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছেন গণভবনে। এরই মধ্যে গণভবন থেকে মিলেছে ৪৬ মণ পেঁয়াজ। এছাড়া আরও ৫০ মণ পেঁয়াজ কাটার অপেক্ষায় রয়েছে।

গণভবনের বিশাল আঙ্গিনায় আগে থেকেই হাঁস-মুরগি ছাড়াও কবুতর, গরু পালন করে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি এবার বিভিন্ন ধরনের ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সঙ্গে তিল-সরিষার পাশাপাশি পেঁয়াজও চাষ করেছেন সরকারপ্রধান।

গণভবন সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গণভবন থেকে পেঁয়াজ কাটা হয়েছে। মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ কাটা হয় এদিন। এই সময়ে পেঁয়াজ পাওয়া গেছে ৪৬ মণ। এছাড়া বাকি জমিতে আরও প্রায় ৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলেও জানা গেছে।

বর্তমান বাজারে দর অনুযায়ী, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সেই হিসেবে গণভবনে উৎপাদিত এই ১০০ মণ পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় এক লাখ ৪০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা।

তবে এই ফসল বাজারে বিক্রি হবে না। জানা গেছে, সরকারপ্রধান তার উৎপাদিত এসব ফসল নিজের জন্য সামান্য রেখে বাকিটা দরিদ্র মানুষ ও কর্মচারীদের মাঝে বিলিয়ে দেন।

আরও জানা গেছে, গণভবন আঙ্গিনায় পেঁয়াজ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎপাদন করেছেন বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান, ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালং শাক, ধনেপাতা, গ্রামবাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, ব্রুকলি, টমেটো, লাউ, সিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাকসবজি। এছাড়া গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা ছাড়াও আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল; গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

অবসর পেলেই এসব তদারকি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবার এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার। এছাড়া গণভবনের আঙ্গিনায় আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরুর খামার, দেশি হাস—মুরগি, তিতির, চীনা হাস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন। পাশাপাশি তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতল, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে বড়শি দিয়ে মাছও ধরেন সরকারপ্রধান।

গণভবন সূত্র জানিয়েছে, উৎপাদিত সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী ছাড়াও দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন।

বিশ্ব যখন সংকটের মুখে, সব দেশে দেশে যখন ভোগ্যপণ্যের চড়া দাম, তখন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বারবারই বলে আসছিলেন, ‘কোথাও এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না পড়ে থাকে। যে যা পারেন, উৎপাদন করুন।’ দেশবাসীর উদ্দেশ্যেই যে শুধু এই আহ্বান ছিল না, গণভবনকে ‘গেরস্তের বাড়িতে’ রূপ দিয়ে সরকারপ্রধান এর প্রমাণ দিলেন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবেলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙ্গিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

ইহসানুল করিম বলেন, এ দেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তার প্রাণ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফসলি উঠোনে নানা ধরনের ফসলের আবাদ তারই ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সবুজ বিপ্লবের ডাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।