রাজধানীতে ক্রিস্টাল মেথসহ দুই মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতার

0
68

এস, এম, মনির হোসেন জীবন – রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ভয়ংকর মাদকসহ মাদক সিন্ডিকেটের দুই সদস্য কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হচেছ – মূলহোতা হোসেন ওরফে খোকন (৩৩) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে (৩২)

র‌্যাব জানিয়েছে, এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। দেশে জব্দকৃত আইসের সবচেয়ে বড় চালান এটি।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এসময় র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা, র‌্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্হিত ছিলেন।

তিনি জানান, আজ শনিবার ভোরে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় গোপনে যৌর্থভাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান মাদকসহ তাদেরকে গ্রেফতার করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযানে প্রায় পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম ভয়ংকর মাদক আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা এছাড়া অভিযানকালে ধৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দুটি মোবাইল তিনটি দেশি-বিদেশি সিমকার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,
এ চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে। এ মাদক সিন্ডিকেটে ২০ থেকে ২৫ জন যুক্ত রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণত নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান দেশে নিয়ে এসে থাকে।

তিনি আরও বলেন, এ মাদক চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে গত কয়েক মাস ধরে ক্রিস্টাল মেথ বা
আইস নিয়ে আসছিল। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে।

‘আইস’র ক্ষতিকর ও ভয়ংকর উল্লেখ করে র‌্যাবের গনমাধ্যম শাখার প্রধান খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতিসাধন করে আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা ও মানসিক অবসাদ এবং বিষণ্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।’

‘শারীরিক ও মানসিক উভয়ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এ মাদকে আসক্ত হয়ে তরুণ-যুবকরা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে’ যোগ করেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

মিয়ানমার থেকে অবৈধ মাদক দেশে আসছে উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে তারা এ আইস বিভিন্ন ভাবে দেশে নিয়ে আসে। পার্শ্ববর্তী দেশের বার্মিজ আচার, কাপড় ও চায়ের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। তারা আচার ও চায়ের আড়ালে এ ভয়ংকর মাদক আইস নিয়ে এসে সেগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দিতো।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, টেকনাফের নাফ নদীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি থাকলেও গ্রেফতার এ আইস সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে নৌকায় লাইটার সিগন্যালের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইস নিয়ে আসে। তারা এর আগে ইয়াবা নিয়ে এলেও বেশি লাভের আশায় সম্প্রতি আইস নিয়ে আসা শুরু করে। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক পথে নিয়ে আসে। এরপর তারা চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে ঢাকায় নিয়ে আসে।

প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মোঃ হোসেন ওরফে খোকন এ চক্রের মূল হোতা। সে তার কাপড়/আচারের ব্যবসার আড়ালে মাদকের চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করতো। তার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

এছাড়াও গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ রফিক এ চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। টেকনাফে অটোরিক্সা চালকের ছদ্মবেশে মাদক পরিবহণ এবং স্থানান্তর করতো সে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সিন্ডিকেটে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারে র‍্যাবের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এব্যাপার ধৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা গ্রহনের প্রস্ততি চলছে।