কেরানীগঞ্জে ব্যবসায়ী সাইফুল হত্যা : মূল পরিকল্পনাকারীসহ আটক ৭

0
171

মনির হোসেন জীবন: রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুলকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী রাজনসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব জানিয়েছে, নিহত ব্যবসায়ী নাম মো. সাইফুল ইসলামকে (২৩)। গত রোববার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টায় ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে গভীর রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ব্যবসায়ী সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় র‍্যাবের হাতে আটককৃতরা হলেন, হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী মোঃ রাজন হোসেন (৩১), মোঃ জানে আলম (৩৬), মোঃ সুমন ওরফে গর্দা সুমন (২৫), মোঃ লিটন হোসেন (২৬), মোঃ দিপু (২৩), মোঃ সরোয়ার আকন্দ (২৬), ও মোঃ সজীব (২৯)।

সোমবার দিবাগত রাতে র‍্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর শাহবাগ থানা এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সূচালো লোহার রড, ১টি ভাঙ্গা ক্রিকেট ব্যাট, ১টি ব্যাটন ও ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার মূলে করা হয়।

আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক (মূখপাত্র) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব সদরদপ্তর ও র‍্যাব-১০ এর বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্হিত ছিলেন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম সাইফুল দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করে আসছিলেন। এছাড়া সে সাতপাখি রোডে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। গ্রেফতারকৃত আসামিরা রাজধানী ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করত। ভিকটিম সাইফুল ছিল এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সহায়তা করতেন। এ কারনে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও অন্যান্য অপরাধীরা ভিকটিম সাইফুল এর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে।

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত রাজন এর নেতৃত্বে জানে আলম, সুমন, লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীবসহ ১০-১২ জনের একটি দল গত ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ভিকটিম সাইফুলকে উচিত শিক্ষা দেয়ার চুড়ান্ত পরিকল্পনা করে। ভিকটিম সাইফুল দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে গ্রেফতারকৃতরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খেজুরবাগ স্কুল রোডে ব্যবসায়ী সাইফুলকে হত্যার জন্য তারা পূর্ব থেকে সেখানে ওৎ পেতে ছিল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছ।

ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গত ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় সাইফুল ইসলাম নামে এক পোশাক ব্যবসায়ীকে কতিপয় দুর্বৃত্তরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসহভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং চোখ উপড়ে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় বোন লাকি আক্তার বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

র‍্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃত রাজন স্থানীয় একটি রিক্সা গ্যারেজ পরিচালনা করত। পাশাপাশি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। গ্রেফতারকৃত রাজন এর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ ৫টির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত জানে আলম রাজমিস্ত্রি’র কাজ করত। পাশাপাশি সে এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ ৪টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

র‍্যাব সূত্র জানান, গ্রেফতারকৃত সুমন কাঠ কাটা শ্রমিক এর কাজ করত। পাশাপাশি সে এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব ভিকটিম সাইফুল হত্যাকান্ড রাজনের সহযোগী ছিল। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সাইফুল হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রাজনসহ প্রত্যেকের নামে খুন, ডাকাতি, অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪/৫ টি করে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।